আত্মহত্যা (রহস্যময় খুন)- শামীমা আক্তার রোজি ,
আজকেও দেরি হয়ে গেল সুভাষ এর।প্রতিদিন দেরি করে আসার জন্য ক্লাস এর বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় ওকে।ওর একটাই সমস্যা।সারারাত জেগে থাকার কারণে সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে যায়।
তাই প্রতিদিন শাস্তি পেতে হয় তাকে।যায় হোক,ব্যাপারটা সেরকম ভাবে গায়ে লাগায় না সুভাষ।লাগবেই বা কেনো?বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্র তাও দ্বিতীয় বর্ষের। গাছারা ভাব তো থাকবেই।পিরিয়ড শেষে ক্লাসে ঢুকে নিজের জায়গায় বসলো সুভাষ
এবং ওর বন্ধুদের টিটকারী আজও শুনতে হচ্ছে তাকে।সুভাষ এর ৪ বন্ধু।শুভ্র,প্রান্ত,অদ্বিতীয়া,স্পর্শিয়া।এই ৫ জনের মধ্যে রয়েছে ভয়ংকর সাহস।সব রকম সমস্যা ওরা ৫ জন ই সমাধান করতে পারে।
ভার্সিটি ছুটির পর জানা গেলো তৃতীয় বর্ষের এক ছেলের লাশ পাওয়া গেছে ভবনের পিছনে। ব্যাপারটা পুরো ভার্সিটি তে ছড়িয়ে গেলো।ছেলেটির নাম দীপ্ত।সুভাষ চমকে গেলো।দীপ্ত ভাইয়া?কিন্তু ভাইয়া তো অত্যন্ত নম্র,ভদ্র একটা ছেলে।তার তো কোনো শত্রু থাকার কথা না।শুধু ও একা নয়।এই কথাটি পুরো ভার্সিটির স্টুডেন্টদের।
এরকম একটা ছেলেকে কেই বা খুন করতে যাবে?
পুলিশ তদন্তের জন্য ভার্সিটি খোলা রাখার নির্দেশ দিলেন।এবং কোনো শিক্ষক,শিক্ষিকা বা শিক্ষার্থী যেনো ভার্সিটি তে অনুপস্থিত না থাকে সেই ব্যাপারে কড়া নির্দেশ দিয়ে গেলেন।লাশটি পুলিশ তাদের সাথে নিয়ে গেলো এবং ছেলের পরিবারকে খবর দেওয়া হলো।সুভাষ এবং ওরা ৪ জন খুব ই অবাক হয়ে গেলো।
এমন কিছু একটা হয়েছে যা বের করা খুবই কষ্ট সাধ্য।পুলিশের তদন্তের জন্য অপেক্ষা করলো ওরা।পরেরদিন আশ্চর্য একটা কাহিনী শুনা গেলো।দীপ্ত নাকি সুইসাইড করেছে।পুলিশ জানালো দীপ্তর শরীরে বিষ পাওয়া গেছে।অত্যন্ত আশ্চর্য বিষয়।এরকম একটা ছেলে কেনোই বা সুইসাইড করতে যাবে যার না আছে প্রেমিকা,না আছে কোনো শত্রু আর না আছে কোন রকম মানসিক চাপ।
কি এমন হলো তার সাথে??আদৌ কি সে সুইসাইড করেছে নাকি এর পিছনে কারো হাত আছে?ভাবতে থাকলো সুভাষ।
শুভ্র আর অদ্বিতীয়া ব্যাপার টা কোনোভাবেই মানতে পারছে না।কারণ দীপ্ত ভাইয়া কে ওরা ২ জন খুব কাছ থেকে চেনে।সুইসাইড করার মত মানুষ তো দীপ্ত ভাইয়া না।আর ব্যাপার টা যেহেতু সুইসাইড কেস তাই পুলিশ ও এই ব্যাপারে কেস ক্লোজড করে দিয়েছে।
দরজার ওপাশে (হরর) ১ম পর্ব – শামীমা আক্তার রোজি
একটা মানুষ তো আর শুধু শুধু সুইসাইড করবে না।যেহেতু পুলিশ এই ব্যাপার টা ক্লোজড করে দিয়েছে তাই ওরা ৫ জন সিদ্ধান্ত নিল ওরাই বের করবে এটা কি আসলেই সুইসাইড কেস নাকি কেউ এই কাজটি সুইসাইড রূপে সবার সামনে তুলে ধরছে?
ব্যাপারটা মোটেও সহজ কাজ হবে না জেনেও রহস্য উদঘাটনে ওরা ৫ জন যা করার প্রয়োজন সব করবে বলে মনস্থির করলো।যেহেতু পুলিশ কেস ক্লোজড করে দিয়েছে সেহেতু কোনো তদন্তের জন্য ক্লাসে না আসলে কিছুই হবে না।এইটাই ওরা কাজে লাগাতে চেয়েছিল।
তাই গোপনে শুভ্র ও অদ্বিতীয়া গেলো দীপ্ত ভাই এর বাড়িতে তার বাবা মা এর থেকে যদি কিছু তথ্য জানা যায়।আর সুভাষ,প্রান্ত ও স্পর্শিয়া গেলো ভার্সিটিতে তাও তৃতীয় পিরিয়ডে।গিয়ে যা দেখলো টা বিশ্বাস করতে পারলো না নিজেদের চোখে।তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী প্রিয়ন্তীর লাশ পড়ে আছে ভার্সিটির মাঠে আর মাঠ জুড়ে ছাত্র – ছাত্রীদের মাঝে তদন্তকারী পুলিশ।
পর পর ২ টি খুন এর পর ব্যাপারটা অস্বাভাবিক ধরাটা আশ্চর্যের কিছুই না।কিন্তু তাও প্রমাণাদি বলতে একটা কথা আছে।লাশ ঠিক সেই জায়গায় পাওয়া গেছে যে জায়গায় দীপ্তর লাশ পাওয়া গেছিলো।সন্দেহের জাল সুভাষের মাথাটা ঘিরে রেখেছে।এবার কোনো নোটিশ জারি না করেই পুলিশ প্রিয়ন্তীর লাশ নিয়ে গেলো তদন্তের জন্য।
ভার্সিটি শেষে শুভ্র আর অদ্বিতীয়ার সাথে দেখা করতে গেলো সুভাষ আর প্রান্ত।ওদের কথা শুনে সুভাষের মনের সন্দেহটাই সত্যি হয়।শুভ্র ও অদ্বিতীয়া জানালো,দীপ্ত কে নাকি গত ৭ দিন ধরে কেউ একজন ফোনে বিরক্ত করতো।কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো ও মারা যাওয়ার পর ওর ফোন খুঁজে পাওয়া যায় নি।
যদিও সবাই ধরে নিয়েছিল ফোনটি হারিয়ে গেছে।এতকিছুর পরে শুভ্র আর অদ্বিতীয়াকে প্রিয়ন্তীর মৃত্যুর খবরটি জানালো সুভাষ।ওদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।একই বর্ষের ২ জন শিক্ষার্থী খুন।কিন্তু সব চেয়ে অবাক করা ব্যাপার হলো দীপ্ত ও প্রিয়ন্তী খুব ভালো বন্ধু ছিল।
২ বন্ধু পরপর খুন হলো।তার মানে অবশ্যই প্রিয়ন্তী এর সাথে জড়িত ছিল।সব মিলিয়ে তাল গোল পাকিয়ে গেলো সুভাষ এর।কি করবে ও এবার?যদিও পরের দিন পর্যন্ত ওদের সবাইকেই অপেক্ষা করতে হবে।কারণ পুলিশ লাশের ব্যাপারে কোনো তদন্ত রিপোর্ট দেয়নি।
চলবে…………
আপনার ফেসবুক আইডি থেকে কমেন্ট করুন