দাদিমার কাছে চিঠি
তানিশা ইসলাম নূর
২১.০৭.২০২১
বুধবার
প্রিয় দাদিমা,
আসসালামু আলাইকুম। আজ ইদ-উল-আজহা সেই উপলক্ষে ইদের শুভেচ্ছা এবং অনেক অনেক ভালোবাসা।”ইদ মোবারক”।আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছেন।দাদিমা আমাকেও আল্লাহ আপনার দোয়ায় ভালো রেখেছেন।আপনাকে অনেক কথা বলার ছিলো।কিন্তু বলে ওঠা হয় নাই।তাই আজ কিছু বলতে চাই।
জানেন দাদিমা,যেদিন আমার আম্মু আমাকে রেখে চলে যান,আব্বুও কাজের জন্য দূরে থাকতেন ঠিক সেইদিনটা থেকে আজ অবধি আমাকে আব্বু-আম্মুর অভাব বুঝতে দেন নি আপনি।কত আদর,স্নেহ,মায়া,মমতা,শাসন,বারন দিয়ে বড় করেছেন ঠিক যেন আমার আম্মু।বরাবরই আমার রাগটা একটু বললে ভুল হবে অনেকটাই বেশি।আর যখন আমি রাগ করে না খেয়ে থাকতাম তখন কত আদর করে বাবু,সোনা,লক্ষী,যাদুমনি বলে কাছে ডেকে খাওয়াতেন।
আজও আপনার অভ্যেসটা রয়ে গেছে দাদিমা।আজও রাগ করলেই সেভাবেই বুঝান আমাকে।সবসময় কত আশা করতেন আমাদের দুইজনকে নিয়ে।বলতেন,”আমার নাতী-নাতনী অনেক বড় হইব।আর তখন আমাকেও এভাবেই এই দুইজন পালবে”।সবসময় সৎ পতজে চলার,ভালো কাজ করার,কারো মনে যাতে আমার কোন কাজ কষ্ট না দেয় সেজন্য অনুপ্রেরনা দিতেন।আর আমিতো বরাবরি দুষ্টু আর অলস টাইপের।ঘরের কোন কাজই করতে চাইতাম না।
এ দেখে যখন আপনাকে পাড়া-প্রতিবেশীরা বলতো,”মাইয়া মানুষ কাম শিখাও।এতো বান্দ্রামী করলে কি হইব।পরের বাড়ি যাওন লাগব না।”বাবাহ তখন কি রাগ নিয়ে আপনি উত্তর দিতেন,”ও কেন কাজ করবে।ও শুধু লেখাপড়া করবে।আর বড় হইয়া রোজগার করে আমাকে খাওয়াবে।”দাদিমা আপনি সবসময় বলতেন,”মানুষ খারাপ বলবে এমন কোন কাজ করিস না বোইন।তাহলে লোকে বলবে দাদি সঠিক শিক্ষা দেয় নাই।”জানেন দাদি আজও আপনার এই কথাটা মেনে চলি।
এখন আপনার থেকে দূরে থাকি।যখন আপনার কথা মনে পড়ে খুব কষ্ট হয়।আপনাকে ফোন দেই।জিজ্ঞাসা করি কেমন আছেন?আপনি বলেন ভালো।কিন্তু আমিতো আপনার কথা শুনেই বুঝে ফেলি আপনি ভালো নাই।আপনি অসুস্ত তাই ঠিকমতো কথাও বলতে পারেন না।তখন আমিও কান্নার জন্য কথা বলতে পারি না।ফোনটা কেটে দেই।আর নামায পড়ে আল্লাহর কাছে বলি,”হে আল্লাহ,এই মানুষটা আমার আম্মু-আব্বু সব।আমার সব আয়ু আমার দাদিকে দাও।আমার আগে আমার দুনিয়াটাকে আমার থেকে কেড়ে নিও না।”দাদি জানেন আপনাকে নিয়ে কত স্বপ্ন আমার।
আপনি শুনলে হাসবেন তাই না? তাও আজ বলি।আমি আপনাকে দেখাতে নিয়ে যাব আপনার নাতনী কোন ভার্সিটিতে পড়ে,কোন অফিসে কাজ করে,আর আপনাকে নিয়ে অনেক জায়গায় ঘুড়তেও যাব।আপনার সব দায়িত্ব আমি নিব।ততদিন একটু অপেক্ষা করেন।আপনার এই বোন একটু উপার্জন করতে পারলেই আপনাকে তার কাছে নিয়ে আসবে।
দাদি আপনি অসুস্থ এই কথাটা শুনলেই আমার চিন্তায় রাতে ঘুম আসে না,মনের মধ্যে অশান্তি কাজ করে,মনে হচ্ছে আমার কলিজাটা কেউ টান দিয়ে বের করে নিতে চাচ্ছে।তখন সারারাত কাদি।আর দাদি এটা শুধুই সামান্য চিঠি নয় কিন্তু।এটা আপনার বৃদ্ধ বয়সে কষ্ট করে লালন-পালন করে বড় করা নাতনীর কষ্ট,অনুভুতি আর অশ্রুসিক্ত ভালোবাসা।
আমিও শহীদ হতে চাই – রাসেল মাহমুদ
দাদি অনেক কিছু লিখতে চেয়েছিলাম।জানাতে চেয়েছিলাম কতটা ভালোবাসি আপনাকে।আসলে আমিও একটা পাগল।ভালোবাসা কখনোই লিখে বা অন্য কোন উপায়ে প্রকাশ করা যায় না।লিখব ভেবেছিলাম অবিরাম কিন্তু আমার চোখের পানি যে আজ বাধ মানছে না।আর আমি চাই না আমার ভালোবাসা,আমার অনুভুতিগুলো এক ফোটা চোখের পানিতে মুছে যাক।দাদি নিজের যত্ন নিবেন নিজের জন্য না হলেও আমার জন্য।আর আপনার কষ্টে একটু একটু করে বড় করা এই অভাগী নাতনীটার জন্য দোয়া করবেন যেন আপনাকে ঘিরে যে স্বপ্নগুলো তার সে যেন তা পূরন করতে পারে।ভালো থাকবেন দাদি।আল্লাহ হাফেয
ইতি
আপনার নয়নমনি
তানিশা ইসলাম নূর
আর আপনি যে নামে ডাকেন(সুমাইয়া)
আপনার ফেসবুক আইডি থেকে কমেন্ট করুন