1. admin@ourbhola.com : আমাদের ভোলা : আমাদের ভোলা
গরীবের বন্ধুত্ব-তানজিমা আনজুম তারিন(বাবুনি) - আমাদের ভোলা
বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩, ০৯:৪৪ অপরাহ্ন
নোটিশঃ
প্রিয় ভিজিটর, দ্বীপজেলা ভোলার বৃহত্তম ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম...

গরীবের বন্ধুত্ব-তানজিমা আনজুম তারিন(বাবুনি)

  • আপডেটের সময় : শনিবার, ৫ জুন, ২০২১
  • ৩২১ বার পঠিত
গরীবের বন্ধুত্ব-তানজিমা আনজুম তারিন(বাবুনি)

“স্বপ্ন তো সবারই থাকে পূরন হয় কত জনের?? গরীবের কী স্বপ্ন দেখতে বারন??” এইকথা ভাবতে ভাবতেই আসছিলাম..আজ বাসাই ফিরতে একটু দেরি হয়ে গেলো..আকাশে কালো মেঘ জমা হলো আর হালকা ঝিরিঝিরি বাতাস বয়ছিলো। তার মধ্যে আবার সন্ধ্যা নেমে আসলো সব মিলিয়ে একটা অন্ধকার অন্ধকার ভাব এসেছে…রাস্তায় তেমন কেউ নেই..দু একটা দোকান খোলা আর কিছু মানুষ দ্রুত হাটছে তাদের ভাব জেনো তাড়াতাড়ি গন্তব্য পৌছাতে পারলেই বাচে…

আমার অবশ্যই ওতো তাড়া নেই বাপু..খোলা আকাশ,ফাকা রাস্তা, ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে হাটতে অনেক মজা লাগছিলো…নিজেকে স্বাধীন মনে হচ্ছিল..মনে মনে ভাবছিলাম আমার থেকে খুশি মানুষ হয়ত পৃথীবিতে আর নেই.. যেতে যেতে হঠ্যাৎ খেয়াল করলাম একটা ছেলে ল্যাম্প পোস্ট এর নিচে বসে ক্ষুদ্র আলোতে কিছু পড়ার চেষ্টা করছে…আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না..সাহস করে গিয়ে দাড়ালাম তার সামনে..দেখি একটা ইংরেজি কাগজ হাতে নিয়ে পড়ার চেষ্টা করছে..

আমি তাকে জিগাসা করলাম “তোমার নাম কি?” “জ্বি ম্যাডাম কিছু বললেন?” সে বললো আমি তাকে আবার জিগাসা করলাম “তোমার নাম??” “আমি আসিফ” “তুমি এখানে কি করছো”? “ম্যাডাম এইটা একটু পড়ার চেষ্টা করতেয়াছিলাম” আমি অবাক হয়ে জিগাসা করলাম “তুমি পড়া শোনা জানো?? “জানি কিছু দুর” সে বললো আমি আবার জিগাসা করলাম “তাহলে তোমার এ অবস্হা কেন?? তুমি এখানে কেন বসে আছো?”

“যাওয়ার জায়গা নেই তো ম্যাডাম” “আচ্ছা তুমি আমাকে ম্যাডাম ডেকোনা.. তারপরে বলো তোমার বাবা মা ?? “আমার তো কেউ নেই। বাবা মারা গিয়েছিল আমার জন্মের দুইবছর পরে. মা মারা গেলেন সেইদিন আর নিজের ভাই বোন খোজ নেইনা” “কেনন?” “আমি হয়তো ঝামেলা” তুমি পড়াশোনা করেছো কতদুর?? “ক্লাস টেন” [বুঝতে পারলাম আমি তার সেম ইয়ার. তাকে আগামীকাল এই জায়গায় সকালে দাড়াতে বলে আমি চলে গেলাম.] আমার মাথায় ছিল না যে তার সাথে গল্প করতে করতে এতটা সময় পার হয়ে গেলো.. বাসায় গেলে বকা খাবো এটাও মাথায় নেই. শুধু ভাবছিলাম যে গরীবদের কি আসলেই স্বপ্ন দেখা বারন?? [বাসায় কলিং বেল দিলাম।আম্মু দরজা খুললো] আম্মু জিগাসা করলো “কোথাই ছিলি?”

আমি আম্মু কে জিগাসা করলাম “আম্মু গরীবদের কী স্বপ্ন দেখা বারন?” [কিছু বললো না আম্মু আমিও চলে গেলাম] পরেরদিন সকালে তাড়াহুড়া করে বেরিয়ে গেলাম.. গিয়ে দেখি আসিফ এখন ও আসেনি. আমি ভাবছিলাম ও কি আসবেনা?? কিছুক্ষণ পর দেখলাম ও আসছে.. আমি ওকে বললাম “আসিফ একটা কথা বলি??” “জ্বি” “আমি কোচিং এ যা যা পড়াশোনা করি তোমাকে প্রতিদিন একটু একটু করে শিখিয়ে দিব.. শিখবে? “আপা আপনার সময় নষ্ট হবে” “আরেহ না.. তুমি শিখবে কি বলো?” “হুম” “আচ্ছা চলো আমরা ওখানে বসি” আসিফ কে সব কিছু পড়াতে পড়াতে আমি আবিষ্কার করলাম আসিফ খুবই বুদ্ধিমান একটা ছেলে. যাকে বলে ব্রিলিয়ান্ট..!!

আসিফ মনোযোগ দিয়ে অংক গুলো করছিল..হঠ্যাৎ থেমে গেল কি জানো ভাবছে..কি হয়েছে জিগাসা করব তখন ও নিজেই বললো… “জীবনে বড়লোক হওয়ার খুব দরকার তাইনা?” “আসিফ এ কথা কেন বলছো??” “বড়লোক না হলে তো কেউ দাম দেয় না..কেউ পাওা দিতে চাইনা.আপনার মতো কজন আছে যে গরীর দের সাহায্য করে?” “জীবনে বড়লোক না মানুষের মতো মানুষ হওয়াটাই আসল..মানুষ্যত্ব দরকার..বিবেগ জাগ্রত করা দরকার,সততার ও ন্যায়ের সাথে জীবন পার করা টা দরকার..” “সৎ পথে চললে,ন্যায়ের কাজ করলে কজনের কপালে দুবেলা দুমুঠো ভাত হয় বলতে পারেন?” “আসিফ,তোমার রিজিকের মালিক আল্লাহ তায়ালা..অসৎ পথের কাজ অথবা টাকা পয়সা কখনো তোমার রিজিক এর দায়িত্ব নিতে পারবে না..

আর সৎ পথে জীবন পার করা ব্যক্তিদের আল্লাহ অনেক পছন্দ করেন” “হু” “আমি একদিন একজন গরীব মানুষ কে, তিনি যে গরীর এই কারনে অনেক খুশি হতে দেখেছিলাম কেনো জানো?” “কেন?” “তিনি আমাকে বলেছিলেন,”মা আমি গরীব তাতে আমার কোনো কষ্ট নেয়..আমি কম আয় করি কম খাই আমার চাহিদাও কম..কিয়ামতের দিন আল্লাহ চাইলে আমার শাস্তি,পাপ কম হবে” আসিফ আর বড়লোকদের অনেক টাকা পয়সা তাদের চাহিদাও বেশি হয়তো তাদের তার জন্য কিয়ামতের দিন জবাবদিহি বেশি করতে হবে” “কিন্তু টাকা পয়সা ছাড়া যে আসল সুখ নেই!!!” “কে বলেছে তোমাকে?” “আমিই বলছি, মানুষকে বিশ্বাস করতে ভয় করে..মানুষ নিজের স্বার্থের জন্য সব করতে পারে” “আমাকে বিশ্বাস করো?” হু(অস্পষ্ট ছিল আসিফের উওর টা) “তুমি আসল ভালোবাসা,প্রেম, আবেগ খুজে পাবে প্রকৃতির মাঝে..একদিন বসে নিজের মতো করে প্রকৃতিকে আবিষ্কার করবে দেখবে প্রকৃতিকে ভালোবাসতে ভালো লাগবে”

“হু” [আসিফের পড়ানো শেষ করে বিদায় নিলাম..এভাবে অনেকগুলো দিন কেটে গেলো…আসিফ কে আমি প্রতিদিন সকালেই পড়াতাম] মাস চারেক পর.. আবারও একি পরিবেশ আমার বাসাই ফিরতে দেরি হয়ে গেলো,আকাশে মেঘ, হালকা বৃষ্টি অন্ধকার। দেখলাম আসিফ বসে আছে..তার চোখে অন্যরকম মায়া.. “আসিফ এখানে কি করছো?” “তোমাকে একটা কথা বলার ছিল” “হুম বলো” “আমাদের এই সম্পর্কের নাম কি?” “এ কথা বলছো কেন?” “এমনি! আমার কোনো বেস্ট ফ্রেন্ড নেই..আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হবে?” “এক মূহুর্ত জন্য আমার মনে হয়েছিল হয়তো আসিফের থেকে ভালো বন্ধু আমি পাব না..আমিও বলেছিলাম হ্যা হব”

“সেই একই পরিবেশে একই জায়গায় আবার হাটছি..কিন্তু সেদিন একা হেটেছিলাম আর আজ আমার সাথে আমার ভর্রষার যোগ্য আমার বেস্ট ফ্রেন্ড আছে..” [কিছুক্ষণ পর বাসাই চলে এসেছি..] বাসাই এসে মনে হচ্ছিল যে আজ বুঝতে পারলাম আসিফকে আমি ঠিক কতটা বিশ্বাস করি..আসিফের প্রতি অন্যরকম একটা শ্রদ্ধা কাজ করত..বেস্ট ফ্রেন্ড হিসাবে সর্বোচ্চ সম্মান দেওয়ার চেষ্টা করি..আসলে জীবনে কিছু সম্পর্কই তো আছে যেগুলো অনেক অদ্ভুত ভাবে হয়ে যায়…এটা সত্যি অস্বাভাবিক.. আসলে জীবনে তো কতই অস্বাভাবিক কিছু ঘটে তা না হলে মানুষ বেঁচে আছে কিভাবে??

Spread the love

আপনার ফেসবুক আইডি থেকে কমেন্ট করুন

উক্ত লেখাটি সোসাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো লেখা
© All rights reserved © 2021 আমাদের ভোলা
Development By MD Rasel Mahmud