চারিদিকে সুনসান নীরবতা। রাস্তায় ঝড়ে পড়া মরা পাতাগুলো পদদলে দলিত হয়ে মরমর ধ্বনি তৈরি করছে। সিয়াম সামনে তাকিয়ে হাটছে তো হাটছেই। প্রবল অনিচ্ছা সত্ত্বেও মায়ের পিড়াপিড়িতে এ রাতে ভূতুড়ে রাস্তায় আসতে হল।পাশের গ্রামে খালার বাড়ি। খালা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় মা খালাকে দেখতে পাঠিয়েছে।খালার বাড়ি যেতে একটি খাল পেরোতে হয়। খালের পরে শ্মশান ঘাট। খাল পাড়ে নৌকা পেতে দেরি হয় সিয়ামের। খাল পেড়িয়ে যথাসম্ভব দ্রুত হাটছে ও।ভাবছে বেশি রাত করা যাবে না। তাতে বিপদ হতে পারে। রাস্তাটা যা ভূতুড়ে।অথচ এতক্ষণে বেশ দেরী হয়েই গেছে।
সম্মুখে চলন্ত পা দুটি সহসাই হার্ট ব্রেক করল। পাশে শ্মশান। দূরে সাদা দুটি আবছা অবয়বে তার দৃষ্টি আটকে গেল। তাকে চেপে ধরল ভয়।পা টিপেটিপে সম্মুখে আগাচ্ছে ও। একটু অগ্রসর হতেই লক্ষ করলো আবছা অবয়বের পাশেই বড় দুটি গর্ত। পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কিছু হাড়গোড়। তুহিনের পিল যেন গেল গলে।ওর মনে হলো কবর ফেড়ে দুটি লাশ উঠে পড়েছে। আর এখন ওরা আলাপে ব্যাস্ত। অপরদিকে সিয়াম ভীত সন্ত্রস্ত। শ্মশানকে সিয়াম কবরস্থান মনে করল।ঘুণাক্ষরেও ওর মনে হল না এখানে কাউকে কাফনের আবরণে আনা হয় না।তাহলে এখানে কাফন পরিহিত লাশ এল কোত্থেকে। সিয়ামের চৈতন্যের অর্ধেক ইতোমধ্যে লোপ পেয়েছে।আলো আধারীতে ওর মনে হল কাফনে মোড়ানো লাশ দুটি যেনো কথা বলছে। সে কথোপকথনের যা আচ করতে পেরেছে…
১ম লাশঃ এই আজ কি অমাবশ্যার রাত?
২য় লাশঃ হ্যাঁ, আমি তো ভুলেই গেছি।
১ম লাশঃ এ জায়গাটাকে জীবিতরা খুব ভূতুড়ে ভাবে তাই না! বহুদিন কোন মানুষ দেখলাম না।
২য় লাশঃ ভাবিস না তোর প্রতীক্ষার সমাপ্তি হবে আজ।ঐ দেখ!
সিয়ামের আত্মা শুকিয়ে কাঠ। কাফনাবৃত দেহ দুটি যেন দুলে উঠল। মনে হলো ওর দিকেই তারা ধেয়ে আসছে।তুহিন সংজ্ঞা হারালো।
মোরগের কুকুরুকু ডাকে ঘুম ভাঙলো শাহিনের। মার সেবা শুশ্রূষায় বেশ রাত করে ঘুমেয়েছিল।তাই উঠিতে বড্ড দেরী হয়ে গেল।উঠানে বাধা বলদ দুটিকে গোসল করাতে খাল পারের দিকে রওনা হল। শ্মশানের রাস্তা পেরোলে খাল পাড়। শ্মশানের পাশে পৌঁছে ও দেখল কে যেন উপুর হয়ে পড়ে আছে।দেহিটিকে উল্টিয়ে দেখে তার মামাতো ভাই সিয়াম।গরুদুটিকে গাছের সাথে বেঁধে সিয়ামকে কাধেঁ নিয়ে বাড়ি ফিরে ও। জ্ঞান ফিরলে রাতের ঘটনা শাহিনকে শুনায় সিয়াম। শাহিনের কেমন যেনো গড়বড়া লাগছে; শ্মশানে কাফনের লাশ। শাহিন গরু দুটিকে গোসল করিয়ে আনতে হলে উদ্যত হয়। তুহিন জেদ ধরে
—আমিও যাব।
—না তুমি ভয় পাবে।
—তুমি সাথে থাকলে ভয় পাব কেন?
—ঠিক আছে চল।
গরুর কাছে পৌঁছে যায় তারা।শাহিন দেখতে পায় দুটি গর্তের পাশে বাশেঁর দুটি খুটি। তাতে সারের সাদা বস্তা ঝুলানো। পাশেই ধানক্ষেত।বুজা যাচ্ছে কৃষকরা সার দিয়ে ভুলে বস্তা বাশে ঝুলিয়ে রেখে গেছে। সিয়াম! ঐ দেখ, সারের বস্তা দুটিকেই তুমি কাফনাবৃত্ত লাশ মনে করেছো।সিয়াম প্রথমে মানতে চায় না। শেষে শাহিন যখন বলে শ্মশানে অক্ষত সাদা কাপড় আসবে কোত্থেকে? শ্মশানে তো লাশ পুড়িয়ে ফেলা হয়। এতক্ষণে সিয়াম তার বোকামি বুজতে পারে।আর মনে মনে বলে ❝আহার নিদ্রা ভয়, যত করে তত হয়।❞
আপনার ফেসবুক আইডি থেকে কমেন্ট করুন